ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা ও ঈদের মিষ্টি ও অনন্য স্বাদ

বাংলার ঘরোয়া রান্নায় ঈদ মানেই মিষ্টির উৎসব, আর সেই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এক অনবদ্য পদ — ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি মুসলিম পরিবারের ঈদের সকালে যেমন অপরিহার্য, তেমনি উৎসবের উচ্ছ্বাসেরও প্রতীক।

✨ ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাইয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

লাচ্ছা সেমাইয়ের উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশে, বিশেষত মোগল আমলে। তখনকার রাজকীয় রান্নাঘরে গমের আটাকে টেনে টেনে পাতলা সুতো বানিয়ে শুকিয়ে রাখা হতো — যাকে বলা হতো “লাচ্ছা”। এই লাচ্ছা পরে ঘি ও দুধে রান্না করে পরিবেশন করা হতো রাজকীয় ডেজার্ট হিসেবে। সময়ের সাথে সেটিই এখন ঈদের অপরিহার্য মিষ্টান্নে পরিণত হয়েছে।

🧈 ঘি: সেমাইয়ের প্রাণ

লাচ্ছা সেমাই ভাজার আসল কৌশলই হলো ঘি ব্যবহার। ঘিয়ে ভাজার ফলে সেমাইয়ের রঙ হয় সোনালি বাদামি, আর গন্ধে ম-ম করে ওঠে পুরো ঘর। সাধারণ তেলে ভাজা সেমাই কখনোই ঘিয়ে ভাজার মতো স্বাদ ও সুবাস দিতে পারে না।

🍶 উপকরণ

  • লাচ্ছা সেমাই – ২০০ গ্রাম
  • ঘি – ৩ টেবিল চামচ
  • দুধ – ২ কাপ
  • চিনি – ১/২ কাপ (রুচি অনুযায়ী)
  • এলাচ – ২–৩টা
  • কিশমিশ, বাদাম, পেস্তা – পরিমাণমতো

🫕 প্রস্তুত প্রণালি

  1. একটি প্যানে ঘি গরম করে তাতে লাচ্ছা সেমাই দিয়ে হালকা বাদামি হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
  2. অন্য পাত্রে দুধ গরম করে নিন।
  3. ভাজা সেমাইয়ের মধ্যে গরম দুধ ঢেলে দিন এবং এলাচ দিন।
  4. মাঝারি আঁচে নেড়ে নেড়ে রান্না করুন যতক্ষণ না দুধ কিছুটা ঘন হয়ে যায়।
  5. শেষে চিনি, কিশমিশ ও বাদাম দিয়ে আরেকটু নাড়াচাড়া করে নামিয়ে ফেলুন।

পরিবেশন

ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই গরম গরম খেতেও দারুণ লাগে, আবার ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে পরিবেশন করলেও স্বাদে অনন্য। এটি সাধারণত ঈদের সকালে, নোনতা খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে পরিবেশন করা হয়।

❤️ শেষ কথা

ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই কেবল একটি খাবার নয়, এটি আবেগ, ঐতিহ্য ও উৎসবের অংশ। এক চামচ সেমাই মুখে দিলেই ঘি, দুধ আর এলাচের মিশ্র ঘ্রাণ যেন শৈশবের ঈদের সকালকে ফিরিয়ে আনে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top